বনজ ঔষধ বা ভেষজ হলো সেই সব ঔষধ যা বনজ বৃক্ষ, লতা ও উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত হয়। প্রকৃতিতে কোটি কোটি উদ্ভিদ ছড়িয়ে রয়েছে, যেগুলো থেকে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ রোগ নিরাময় ঔষধ সংগ্রহ করে আসছে। আজও দেখা যায়, প্রাচীন চিকিৎসায় ব্যবহৃত ফুল, ফল ও লতাপাতা নানা জটিল রোগের চিকিৎসায় কার্যকর। এটি প্রমাণ করে যে, বনজ ঔষধকে কখনো অবহেলা করা উচিত নয়।
বনজ ঔষধে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা আধুনিক এ্যালোপ্যাথিক ঔষধের সমতুল্য কার্যকর এবং অনেক কম দামে সহজলভ্য। এছাড়া কিছু বনজ ঔষধ রয়েছে যা আমাদের আধুনিক ওষুধে পাওয়া যায় না।
উদাহরণস্বরূপ, অড়হর পাতা। এর রস ভাইরাসজনিত জণ্ডিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যদিও এর মূল উপাদানের কার্যকারিতা সম্পূর্ণভাবে উদঘাটিত হয়নি, আধুনিক গবেষণায় এর কার্যকারিতা স্বীকৃতি পেয়েছে।
আরেকটি পরিচিত উদ্ভিদ হলো পেঁয়াজ। পেঁয়াজ ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে। এটি রক্তের অণুচক্রিকাগুলোকে সংযোগে বাধা দেয়, যা কিছুটা এসপিরিনের মতো কার্যকরী, এবং আজকাল করোনারি হৃদরোগের প্রতিরোধেও এসপিরিন ব্যবহৃত হয়। প্রচুর পেঁয়াজ-রসুন খাওয়া ভারতীয় সম্রাটদের মধ্যে হৃদরোগ কম দেখা যাওয়াও এই কারণে সম্ভব হয়েছিল।
রসুন ধমনীর স্থূলতা প্রতিরোধে ও রক্তের কোলেস্টরল কমাতে কার্যকর। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও রসুনের উপকারিতা নিয়ে গবেষণা চলছে। অনুরূপভাবে, তেলাকুচা ও এক প্রকার দুর্বা ঘাসও ডায়াবেটিসে কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে।
আমাদের দেশে পাওয়া নয়নতারা গাছ থেকে উদ্ভাবিত হয়েছে ভিনক্রিস্টিন, একটি শক্তিশালী ক্যান্সার-বিরোধী ঔষধ। এটি নিউকিমিয়া বা রক্তের ক্যান্সারে ব্যবহার করা হয়। পশ্চিমা দেশ থেকে এই ঔষধ বড় দামে কেনা হয়, কারণ এর গবেষণা ও উৎপাদন বাংলাদেশে হয়নি।
বনজ ঔষধ যুগে যুগে মানুষের জন্য অমূল্য সম্পদ। প্রাকৃতিক ওষুধের সম্ভাবনা, সঠিক জ্ঞান ও গবেষণার মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে মিলিয়ে নতুন দিশা তৈরি করা সম্ভব।

